1 min read

বাংলাদেশের বিমান বাহিনীতে F-7 ও আধুনিক যুদ্ধবিমান: সরকারের ভূমিকা, কেনার প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক

বাংলাদেশের বিমান বাহিনীতে F-7 ও আধুনিক যুদ্ধবিমান: সরকারের ভূমিকা, কেনার প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
প্রথম পর্ব- বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অন্ধকার অধ্যায় - ষড়যন্ত্রের ঘূর্ণি, বিদ্রোহের আগুন

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিমান বাহিনী মূলত পাকিস্তান আমলের পুরনো F-86 Sabre এবং F-6 যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভর করত। এই বিমানগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই পুরনো ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় বিমান বাহিনীর কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। তখন দেশের বাজেট ছিল সীমিত এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে নতুন যুদ্ধবিমান কেনাও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক কঠিন ছিল।

এরশাদ সরকারের প্রথম চীনমুখী পদক্ষেপ

এরশাদ সরকারের সময় চীনের দিকে প্রথমবারের মতো বড় পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৮৯-৯০ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের অধীনে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ডেলিভারি ও তুলনামূলক কম দামে F-7MB যুদ্ধবিমান এবং FT-7B প্রশিক্ষণ বিমান কেনা শুরু হয়।

F-7 আসলে সোভিয়েত ইউনিয়নের MiG-21 বিমানের চীনা সংস্করণ, যা চালানো সহজ এবং সেই সময়ের জন্য আধুনিক ছিল। এই বিমানগুলো যুক্ত হওয়ায় তখনকার সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের বিমান বাহিনী অনেকটাই বের হয়ে আসতে পারে।

খালেদা জিয়া সরকারের সময় দ্রুত প্রতিস্থাপন

১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশের বেশি যুদ্ধবিমান নষ্ট হয়ে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার দ্রুত চীন থেকে আরও F-7MB, FT-7B এবং K-8W প্রশিক্ষণ বিমান সংগ্রহ করে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে আরও আধুনিক F-7BG, FT-7BG ও বাড়তি K-8W ট্রেইনার বিমান বিমান বাহিনীর বহরে যোগ হয়। দ্রুত নতুন বিমান যুক্ত করার প্রয়োজন, বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং চীনের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে এই সময়েই F-7 বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান যুদ্ধবিমান হয়ে ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের আধুনিকীকরণের উদ্যোগ

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ‘Forces Goal 2030’ ঘোষণা করে সামরিক বাহিনীকে আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়। এই সময়ে বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত হয় Yak-130 (আধুনিক রুশ-বেলারুশিয়ান প্রশিক্ষণ ও লাইট ফাইটার বিমান), K-8W প্রশিক্ষণ বিমান, Mi-171 হেলিকপ্টার, এবং আরও উন্নত F-7BGI ও FT-7BGI যুদ্ধবিমান।

মূল লক্ষ্য ছিল প্রশিক্ষণ ও মাল্টিরোল (একাধিক কাজে ব্যবহারের) সক্ষমতা বাড়ানো। তবে বাজেট ও সরবরাহের বিষয়টি আগের মতোই চীনের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

বিতর্ক: প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও দুর্ঘটনার প্রবণতা

তবে, F-7 এবং অন্যান্য চীনা যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। এই বিমানগুলো মূলত ১৯৬০-৭০ দশকের ডিজাইনের, তাই আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের তুলনায় এদের প্রযুক্তি সীমিত।

বাংলাদেশে F-7 ও FT-7 বিমানের দুর্ঘটনা অনেক বেশি—১৯৯০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও পাইলট মৃত্যুর ঘটনা এই সিরিজেই ঘটেছে।

অনেক সামরিক বিশ্লেষকের মতে, দ্রুত ও সস্তায় বিমান কেনার এই নীতি বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা ও দক্ষতার দিক থেকে পিছিয়ে দিয়েছে।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশলগত সমীকরণ

বিমান কেনার পুরো প্রক্রিয়ায় সামরিক চাহিদার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে—এমন অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। চীনা যুদ্ধবিমানে নির্ভরতার ফলে বাংলাদেশের সামরিক নীতিতে বহুমাত্রিকতা না এসে একরকম ‘একদেশনির্ভর’ পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেটি ভারতসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত সংশয় সৃষ্টি করে। এছাড়া, ক্রয় চুক্তিতে স্বচ্ছতা, কমিশন, ও দুর্নীতির অভিযোগও কখনো কখনো জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে।

এবার আসুন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যে সব বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সংক্ষেপে জেনে নেই-

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বড় সামরিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৭৩ সালে, কুর্মিটোলা, ঢাকায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া F-86 Sabre জেটটি নতুন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চ্যালেঞ্জের প্রতীক ছিল।

সে সময় একজন তরুণ পাইলট প্রশিক্ষণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে গুরুতর আহত হন, তবে প্রাণে বেঁচে যান। যুদ্ধবিধ্বস্ত, নবীন এয়ারফোর্সের জন্য এই দুর্ঘটনা ছিল সতর্ক সংকেত—দেশ তখনও শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনে, আর সামরিক খাত ছিল টেকনিক্যাল সংকটে, পুরনো যন্ত্রাংশ ও সীমিত বাজেটের মধ্যেই চলছিল।

১৯৭৫ সালে আরেকটি F-86 Sabre দুর্ঘটনায় প্রথম বারের মতো একজন পাইলট প্রাণ হারান । এসময় দেশের রাজনীতি অস্থির; আগস্টেই মুজিব হত্যাকাণ্ড, সামরিক অভ্যুত্থান, রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতা।

৫ আগস্ট ১৯৮৪—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার F27-600 (S2-ABJ) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি, দৃষ্টিসীমা কম, বারবার অবতরণ ব্যর্থ—শেষবার রানওয়ের মাত্র ৫০০ মিটার আগে ডোবায় আছড়ে পড়ে। এই ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হন (৪ জন ক্রু, ৪৫ জন যাত্রী; যাত্রীদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ, একজন জাপানি)। পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমা রোকসানা—বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট।

১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে বিমান বাহিনীর ৪০টি F-6 যুদ্ধবিমান ও ৪টি মিল-৮ হেলিকপ্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এটি বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর জন্য এক বড় ধরনের ক্ষতির ঘটনা।

১৯৯৩ সালে দুটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান মাঝ আকাশে সংঘর্ষে পড়ে, যাতে তিনজন পাইলট নিহত হন।

একই বছর FT-5 যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট কুদ্দুস নিহত হন।

১৯৯৪ সালে একটি F-7 যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়, তবে পাইলটের অবস্থা বা প্রাণহানির সংখ্যা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সীমিত।

১৯৯৬ সালের ৮ মে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে থাকা সাবেক সোভিয়েত-এর তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এই বিমানটি তখনও সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

১৯৯৮ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চীনের তৈরি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।

একই বছরের ১৭ নভেম্বর, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ন্যাঞ্ছাং এ-৫সি মডেলের একটি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। এই বিমানটি চীনে তৈরি, মূলত আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করে থাকে।

২০০১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি FT-7B ট্রেনার যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহসিন নিহত হন।

২০০২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি A-5C যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট আদনান ওই বিমানে ছিলেন এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। বিমানটি প্রশিক্ষণ মিশনে অংশ নিচ্ছিল বলে জানা যায়।

২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি Mi-17-200 হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হন, যারা সবাই বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

২০০৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি FT-7B বিমান প্রশিক্ষণ ফ্লাইট চলাকালে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে পাইলট আহত হন।

একই বছর আরও একাধিক দুর্ঘটনায় একটি Piper Cessna S-2 ও একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।

২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানে দুই প্রশিক্ষণার্থী পাইলট ছিলেন, যারা উভয়েই দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

একই বছরের ৭ জুন ঢাকার উত্তরার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7MB যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মিশনের সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাটি রাজধানীজুড়ে আলোড়ন তোলে।

২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই বিমানে ফ্লাইট ক্যাডেট তানজুল ইসলাম ছিলেন এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। প্রশিক্ষণ চলাকালে বিমানটি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল যশোরে একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সাল মাহমুদ নিহত হন।

২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাহাড়িয়া গ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7MB যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ হাসান বিমানটি চালাচ্ছিলেন এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

২০০৯ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে একটি FT-6 যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানের পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ইজেক্ট করতে সক্ষম হন এবং বড় ধরনের প্রাণহানি হয়নি।

একই বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়া সদরে একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই ঘটনায়ও পাইলট সামান্য আহত হন।

২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালে বিমানটি নদীতে পড়ে গেলে পাইলটরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে নিজেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

একই বছরের ২০ ডিসেম্বর বরিশালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান আকাশে সংঘর্ষের ফলে বিধ্বস্ত হয়। এতে দুইজন স্কোয়াড্রন লিডার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। কুয়াশা ও যোগাযোগজনিত বিভ্রান্তি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

একই বছর চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি F-7MB যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ইজেক্ট করে প্রাণে বেঁচে যান।

২০১২ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এল-৩৯ অ্যালবাট্রস জেট ট্রেনার বিধ্বস্ত হয়। এই প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট রেজা শরীফ পাইলট ছিলেন এবং দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তার সঙ্গে থাকা অপর পাইলট আহত হন। প্রশিক্ষণ চলাকালে আকস্মিক কারিগরি সমস্যার কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হলেও রেজা শরীফকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

২০১৩ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ন্যাঞ্ছাং এ-৫ যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মিশনের সময় বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় পাইলট সফলভাবে ইজেক্ট করতে সক্ষম হন এবং তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

একই বছরের ২০ মে যশোরে একটি এল-৩৯ প্রশিক্ষণ বিমান অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। বিমানটি স্বল্প উচ্চতায় নেমে এসে দ্রুত গতির কারণে রানওয়ের বাইরে চলে যায়। এতে পাইলট আহত হন।

২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এবং ৩০ এপ্রিল, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি পৃথক পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান পৃথকভাবে বিধ্বস্ত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বিমানগুলো প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে ছিল এবং দুর্ঘটনায় পাইলটরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। বিমান দুটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০১৫ সালে পর পর ৩ মাসে ৩টি বিমান দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে একাধিক পাইলট নিহত হন।

২০১৫ সালের ১৩ মে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটি এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় একজন প্রশিক্ষক নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন।

একই বছরের ২৯ জুন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলে একটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই ফ্লাইটে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তাহমিদ পাইলট ছিলেন এবং দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।

একই বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হেলিকপ্টারটি চাষের জমিতে অবতরণে বাধ্য হয় এবং এতে আরোহীরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

২০১৭ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালে আকস্মিকভাবে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পড়ে যায়। পাইলটরা দ্রুত ইজেক্ট করতে সক্ষম হন এবং তারা গুরুতর আহত হননি।

একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আকাশে দুইটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান সংঘর্ষের পর বিধ্বস্ত হয়। আকাশে অনুশীলন চলাকালে দুটি বিমান কাছাকাছি চলে আসে এবং সংঘর্ষের মুখে পড়ে। সৌভাগ্যবশত, উভয় বিমানের চারজন পাইলটই ইজেক্ট করে নিরাপদে অবতরণ করেন।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে একটি মিল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারে কুয়েতি সামরিক কর্মকর্তা-সহ আরও কয়েকজন আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও বেশ কয়েকজন আহত হন।

একই বছরের ১ জুলাই যশোরে একটি কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় দুইজন পাইলট নিহত হন।

একই বছরের ২৩ নভেম্বর টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমান রকেট ফায়ারিং অনুশীলনের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানের পাইলট ইজেক্ট করতে সক্ষম হলেও ঘটনাস্থলে তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল দ্রুত উদ্ধার কাজ চালায় এবং বিমান বাহিনী তদন্ত শুরু করে।

২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেও পরে তিনি মারা যান।

প্রতিটি বড় দুর্ঘটনার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে—যান্ত্রিক ত্রুটি, পুরাতন যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি, কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া। এতে শুধু যুদ্ধবিমান হারায়নি, মূল্যবান প্রশিক্ষিত পাইলটের জীবনও কেড়ে নিয়েছে।

পরবর্তী পর্ব- বিমান বাংলাদেশ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিকল্পিত বিমান দুর্ঘটনা!